Thursday, July 31, 2008

ক্যনাডায় আসবেন কি, আসবেন না।

আমি, ফেরদাউস, ক্যনাডা এসে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, তা বিশ্বের ইচ্ছুক বাংলাভাষী পাঠকদের মাঝে বিতরন করতে চাই বিধায় এই প্রতিবেদন বা ব্লগ উপস্থাপন করা।

আমার কাছে বেশ কয়েকটি ইমেইল এসেছে, যার মাধ্যমে বিশেষত বাংলাদেশীরা ক্যনাডাতে চাকুরী নিয়ে বা অভিবাসন আাবেদন করে এই তথাকথিত ল্যন্ড অফ অপরচুনিটি অর্থাৎ ''সুযোগের দেশে'' আসতে ইচ্ছুক।

এই ল্যন্ড অফ অপরচুনিটি” অর্থাৎ ''সুযোগের দেশে'' , আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। আজ জুলাই ৩১, ২০০৮ খৃঃ, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, বাংলাদেশে ফিরে যাব, মোটামুটি সপরিবারে। এখানে ছ'বছর অবস্থানে আমার কোন সঞ্চয় তো হয় নি, বরঞ্চ জমান প্রায় পনের লক্ষ টাকা ক্যনাডার ন্যয় উন্নত অর্থনীতি হজম করে ফেলেছে। হতে পারে আমি একজন হত ভাগা বা এই মহান দেশে নিয়মানুসারে আমি চলতে পারিনি বিধায় এই দশা।

আমার ব্যর্থতা মানে এই নয় যে এই মহান দেশে এসে লোকজন সফলতা লাভ করেন নি। বহু লোক করেছেন, তাদের মতে এদেশের ন্যয় কোন দেশ হয় না। তারা মুলত ব্যবসায়ী, ''সৎ'' ভাবে এখানে ব্যবসা করে উন্নতি করেছেন এবং বাংলাদেশী মূল্যায়নে সহজেই কোটি পতি। পেশা ভিত্তিক অংশে যারা ক্যনাডা অভিবাসন গ্রহন করেছেন, তাদের মধ্যে, আমার ধারনা, তুলনামুলক ভাল অবস্থায় আছেন ব্যংকিং পেশাজীবিরা, এর পর আছেন বাজারজাতকরনের পেশাজীবিরা, সার্ভিস ইন্ডাষ্ট্রিতে নিয়োজিত কর্মীরাও আমার ধারনায় ভাল আছেন। সাধারন প্রযুক্তিবিদরা কোনরকমে আছেন (যা আমরা বলি ''চলে যাচ্ছে'', আপাততঃ সেরকম আছেন)

সবই তো ভাল বললাম, তা হলে খারাপ কারা আছেন? খারাপ আছি, আমরা, যারা এই সরকারের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মিষ্টি কথায় ভুলে থাকি বা বিশ্বাস করি। আমার পূর্বতম ব্লগেই আমি বলেছি কোন পেশাতে আমি অভিবাসন গ্রহন করেছি। যখন অভিবাসনের জন্য আবেদন করি, তখন ক্যনাডার সরকারী ওয়েব সাইট অনুযায়ী, ইলেক্ট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল পেশার চাহিদা ক্যনাডায় সর্বাধিক বলে বলা হয়েছে। সেটা ছিল ২০০১ খৃঃ তে, দুবাই তে। এই পেশায় নিয়োজিত অনেকের তো 'ইন্টারভিউ'ই নেন নি ক্যনাডার ইমিগ্রেসান কর্তৃপক্ষ, সরাসরি পুরো পরিবারকে অভিবাসন দিয়ে দিয়েছেন। আসার পর এই দেশের ভিন্ন চেহারা, ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং এ যারা টেলিকম পেশা থেকে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই টেলিকমের কোন পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন নি।

তবে যারা ইলেক্ট্রনিক ডিজাইন বা মাইক্রোকন্ট্রোলার সম্পর্কিত ডিজাইনের সাথে জড়িত, তাদের ব্যপার ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক ডিজাইন বা মাইক্রোকন্ট্রোলার সম্পর্কিত ডিজাইনের কোন প্রতিষ্ঠান এখনও হয়েছে কি না, আমার জানা নেই।

এরপর যখন বেকার থাকবেন, তখন আপনাকে এখানকার নিয়মানুসারে, বেকার ভাতা পেতে পারেন। (পেতে পারেন এ জন্য বলছি, কারন বেকার ভাতা নির্ভর করে আপনি কত মাসের জন্য কোথায় কাজ করেছেন। উদাহরন সরুপ বলতে পারি, টরন্টোতে যদি প্রথমবার অভিবাসিত হয়ে কাজ করেন, তা হলে আপনাকে ৯৬০ ঘন্টার মত কাজ করতে হবে)

৯৬০ ঘন্টা;

প্রতি সপ্তাহে ৪০ঘন্টা হলে, মাসে ৪০x=১৬০ঘন্টা;

৬মাস x ১৬০= ৯৬০ঘন্টা; তথা আপনাকে নুন্যতম ছ' মাস একনাগারে কাজ করতে হবে।

ওন্টারিও ছাড়া অবশ্য অন্যান্য প্রদেশে কম শ্রম ঘন্টা দিতে হয় বলে আমার মনে পড়ে।

একটা কথা পেশাজীবিদের স্মরন করিয়ে দিই, আপনি যেই পেশাতেই আবেদন করে ক্যনাডায় প্রবেশ করুন না কেন, ক্যনাডায় প্রবেশ করা মাত্র ঐ পেশা এদেশের আইন অনুয়ায়ী অচল। ওটা সচল করতে গেলে পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়ে এদেশীয় লাইসেন্সধারী পেশাজীবির অধীনে নুন্যতম একবছর কাজ করতে হবে। এই প্রথায় আপনার মূল্যবান তিন বছর চলে যাবে, যদি এক সুযোগে এই সকল বাধা অতিক্রম করা যায়।

এই মূল্যবান তিন বছরে আপনাকে মাসে ১৫০০ (দেড় হাজার) ডলার করে তিন বছরে ৫৪০০০(চুয়ান্ন হাজার) ডলর গুনতে হবে।

মাসিক দেড় হাজার ব্যয় ধরা হয়েছে, যদি আপনার গাড়ি না থাকে।

গাড়ি থাকলে মাসিক ব্যয় নুন্যতম ২০০০ (দু হাজার গুনতে হবে)। মানে তিন বছরে ৭২০০০(বাহাত্তর হাজার) ডলার। কারন মাসিক গাড়ির বীমাই নতুনদের জন্য প্রায় ৩০০(তিনশত) ডলার। তাও বর্তমানে তা নির্ভর করে তেলের মূল্যর স্থিতিশীলতার ওপর। এর অর্থ এই দাড়াচ্ছে, তিন বছর সাধারন কাজে নিয়োজিত হয়ে আপনাকে এখানকার পেশাজীবি লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে।

তবে দুঃখের বিষয় হল, তিন বছর এতটা খেটে আপনি এখানকার স্বীকৃত পেশাজীবি হলেন। মনে করলেন, না এবার একটা ভাল চাকুরী পেয়ে দেশে ঘুরে আসব, আপনার সে আশায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুঁড়ে বালি। আপনার নতুন পেশায় চাকুরী পেতেই কয়েক বছর অতিবাহিত হতে পারে। ঠিক ঐ সময়ই আপনাকে বিচক্ষনতার সাথে ভাবতে হবে, এই দেশটায় বর্ণবাদের অস্তিত্ব আছে কি?

এত কিছু বলার পর একটা সুপারিশমালা আমার দেবার ইচ্ছে রইলঃ-

১। প্রথমে বিচক্ষনতার সাথে চিন্তা করুন, ক্যনাডা আসার আপনার উদ্দেশ্য কি?

আপনি যদি এক কথায় এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসতে চান, দেশে পিছু টান নেই, পাঁচ থেকে দশ দেশে ঘুরে আসার চিন্তা করছেন না, এখানে আপনার পেশায় সফল হলেন কি, হলেন না তা নিয়ে চিন্তিত নন, তা হলে নির্দ্বিধায় চলে আসুন।

কিনতু, এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসতে না চান, দেশে পিছু টান বিদ্যমান, প্রতি বচর দেশে ঘুরে আসার চিন্তা করছেন, এখানে আপনার পেশায় সফল হলেন কি, হলেন না তা নিয়ে নিশ্চয়ই চিন্তিত, তা হলে ক্যনাডা আপনার জন্য না। আর আমার মতে যারা দেশ প্রেমিক, তাদের জন্য ক্যনাডা কোন মতেই গন্তব্য হতে পারে না।

২। আপনি যদি পেশাজীবি না হন, রিফিউজি গোত্রে বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে এই মহান দেশে আসতে চান, তা হলে কোন দ্বিধা না করে চলে আসতে পারেন। রিফিউজি বা রাজনীতিকদের জন্য যতটুকু জানা যায়, ক্যনাডা এক মহান দেশ। কোন টাকা পয়সা নিয়ে আসতে হবে না। ঐ গোত্রে প্রবেশ করতে পারলে, ক্যনাডা সরকারই আপনার পরিবারের জন্য ভাতা ও বাসস্থান বরাদ্দ করবে। ঐ অবস্থায় অনেকে ট্যক্সি চালক হয়ে জানা যায় ভাতা সহ ক্যাশ মাসিক ৩০০০ ডলার ও আয় করে সুখে শান্তিতে থেকে ভবিষ্যতে বাংলা গ্রসারীর মালিক হয়ে, আমার ধারনা, বর্তমান বাংগালী অভিবাসনের আগমন এই হারে চলতে থাকলে, অদুর ভবিষ্যতে (১০ থেকে ১৫ বছরে) আপনি কোটিপতি হয়েও যেতে পারেন।

এখন সিদ্ধান্ত আপনার।

পেশাজীবি হিসেবে আসতে চাইলে, সরাসরি আবেদন করুন। দালাল ধরার প্রয়োজন নেই। আপনার পয়েন্ট হিসেবে আপনি ও পরিবার যোগ্য কি না, তা সরকারী ওয়েব সাইট থেকে পেশা দেখে হিসেব করে নির্ণয় করে নিন।

ক্যনাডার সরকারী ওয়েব সাইট নিচে দেয়া হল।

http://www.cic.gc.ca/english/index.asp

সবাইকে ধন্যবাদ।

3 comments:

Abdullah Al Mamun (Aakash) said...

ধন্যবাদ তথ্যবহুল লেখার জন্য

Bangla World said...

আসা করি যাদের জন্য লেখা, তারা উপকৃত হবেন।

Abdullah Al Mamun (Aakash) said...

যদি সম্ভব হয় তাহলে আমেরিকা (স্বপ্নের দেশ) নিয়ে লিখলে খুশি হব। ধন্যবাদ।